Uttorer Kantho

পদোন্নতির মানদণ্ড সচিবদের ‘সুপারিশ’

অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলতে এক শ্রেণির কর্মকর্তা এখনো অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ। অতীতে বঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তাদের দলে ঢুকে তারা পদোন্নতি বাগিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এসব কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী ছিলেন। পদোন্নতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আমলের সচিবদের মৌখিক সুপারিশ বিবেচনা করা হচ্ছে। আবার তাদের সুপারিশে অতীতের অনেক বঞ্চিতকে বাদও দেওয়া হয়েছে। এর নেপথ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিবরা কাজ করছেন বলে অভিযোগ। এতে গত ১৬ বছর পদোন্নতিবঞ্চিত ও অবহেলিত কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

জানা গেছে, বিসিএস ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা বদরে মুনির ফেরদৌস ও তার স্ত্রী ১৫ ব্যাচের সাবিনা আলম আওয়ামী সরকারের সময় দুটি বড় জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন। সরকারের কত আস্থাভাজন হলে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ডিসি পদে নিয়োগ পান, তা সহজে অনুমান করা সম্ভব। ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ১১ মে পর্যন্ত বদরে মুনির নোয়াখালীর ডিসি ছিলেন। বর্তমানে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ব্যাংকিং অনুবিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটিও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। অথচ নিজেকে তিনি পদোন্নতিবঞ্চিত দাবি করেন! তার স্ত্রী অতিরিক্ত সচিব সাবিনা আলম প্রায় ৩ বছর হবিগঞ্জের ডিসি ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

শুধু তারা-ই নন, আরও দুজন আওয়ামী লীগের সময়ে ডিসি ছিলেন। আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে তারা পরে আর পদোন্নতি পাননি। অথচ শেখ হাসিনার পতনের পর এসব কর্মকর্তা খোলস পাল্টে বঞ্চিতের মিছিলে যোগ দিয়ে পদোন্নতি নিয়েছেন। তারা হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক ডিসি মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস এবং মানিকগঞ্জের সাবেক ডিসি ড. রাশিদা ফেরদৌস।

কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মুকেশের বিরুদ্ধে ঘুষকাণ্ড, কর্মচারীদের হয়রানিসহ বেশ কিছু অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে তাকে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। তিনি শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মুকেশ। মানিকগঞ্জের ডিসি ছিলেন ড. রাশিদা ফেরদৌস। তিনিও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি বিসিএস ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এ ছাড়া পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন ইমামউদ্দীন কবীর। তার বিরুদ্ধে পাবনার এডিএম থাকাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে তাকে ফেরত আনা হয়।

দেওয়ান মো. আবদুস সামাদ নামে একজন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। আর্থিক অনিয়মের কারণে তিনি পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন। তার পদোন্নতির জন্য ২০২২ সালে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নওগাঁ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহা. ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধাসরকারিপত্রও (ডিও) দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত এসব কর্মকর্তা এখন রাজনীতির পালাবদলে নিজেদের বদলে নিয়েছেন।

ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা গত ১৬ বছর গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ ডিসি পদও তাদের দখলে ছিল। এখন সেসব কর্মকর্তা খোলস পাল্টে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার পরিচয় দেওয়া শুরু করেছে। এটা প্রশাসনের জন্য কোনোভাবেই ভালো হবে না। আর তাদের নতুন পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এ ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিবরাও মৌখিকভাবে তাদের পছন্দের কর্মকর্তাদের জন্য সুপারিশ করছেন। এজন্য দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী সুবিধাভোগীরা এখনো পদোন্নতি ও ভালো পদায়ন পাচ্ছেন।

বঞ্চিতরা আরও বলেন, তারা প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাবেন। অথচ শুধু বিএনপি-জামায়াত সন্দেহে গত ১৬ বছর ধরে শত শত কর্মকর্তাকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। তাদের কেউ কেউ এখনো বঞ্চিত।

মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *