Uttorer Kantho

বিএনপির মিত্ররাও চায় দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ

দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রকাঠামোয় কী কী সংস্কার আনতে চায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, দ্রুততম সময়ে সেটার একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপির মিত্ররা।

গত রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

বিএনপির মতো তাদের এই মিত্ররাও মনে করেন, জোরজবরদস্তি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি), বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে গেছে। এ অবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জনগণের আকাঙ্ক্ষিত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চান তারা, তবে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়।

১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। দুই জোটের নেতারা মনে করেন, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচিত পার্লামেন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু করা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ নির্বাচিত পরবর্তী সরকার এগিয়ে নেবে। কেননা, যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি ছিল ৩১ দফা রূপরেখা—যেখানে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের অঙ্গীকার রয়েছে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বিএনপিসহ মিত্ররা এই রূপরেখা ঘোষণাও করেছিল। যুগপতের প্রধান শরিক বিএনপি তখন জানিয়েছিল, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ওই সরকারই রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করেছে। মোট কথা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আমরা চাই, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই সংস্থাগুলোর সংস্কার করবে। জনগণ জানে এই সংস্থাগুলো সংস্কার করতে কত দিন সময় লাগবে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই সময় নিয়ে জনগণের সামনে একটি রোডম্যাপ তুলে ধরবে।

বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কালবেলাকে বলেন, তারা মনে করেন, দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা একটি যৌক্তিক সময় দিতে চান। তাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার অবিলম্বে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।

১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান কালবেলাকে বলেন, বৈঠকে দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যাকবলিত এলাকায় কীভাবে আরও সহযোগিতা বাড়ানো যায়, বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো যায়—সে বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা মনে করেন, হঠাৎ করে ভারত তাদের বাঁধ খুলে দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের মানুষ বন্যায় ভেসে গেছে। ভারতের আগে অবহিত করা উচিত ছিল, কিন্তু তা করেনি।

মন্তব্য

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *